Wednesday, December 5, 2012

নামো



সেখানেই নামো, যেখানে নামার কথা ছিল
উদ্ভ্রান্ত জামার হাতায় কালিঝুলি মেখে বসে থেকো না জানালার সিটে।

লেকের কিনার ঘেঁষে, বাঁকা নারকেল সার
নীলচে রুপোলি জলে একছবি আকাশের ফালি-
তাকিয়ে থেকো না তার উঁচু-নিচু মাপতে আবার
নামতে যখন হবে, কেন আর মিছেমিছি গড়িমসি বলো?

এ তো আর মহাকাশ-গামী কোন যান-টান নয়
নেহাত ভিখিরি কিছু চাকুরের বাস
কনুই-পেটের কিছু মৃদুমন্দ কথন
ঘামে চুপচুপে কিছু অন্তর্বাস
স্টপ স্টপে কিছু ক্লান্ত যাপন

নেমে পড়ো- ধুলো মেখে, হাওয়ায় উড়িয়ে দাও
টুকরো টিকিট আর বাকি যত খুশকির গ্লানি
নেমে যাও- দ্বিধাহীন, শহরতলিরও নীচে
যেখানে ত্রিসন্ধে চলে অকাতর জীবন-দালালি
নেমে এসো। এ শহরে সকলেই আকাশ দেখেছে, কেউ
উঠতে পারেনি।

Monday, November 26, 2012

3.1415926...


মলের দরজা দিয়ে নাচতে নাচতে বেরোচ্ছি, এমন সময় শুনি- “এই, শোনো, এরা বলছে, ‘লাইফ অব পি’ বইটা নাকি ভাল হয়েছে। টিকিট কেটে নিই?”

কুল্যে দেড়খানা বাক্য, তাতেই আমায় কুপোকাত করে দেওয়ার মতো যথেষ্ট আগুন ভরা। প্রথম কথা, সিনেমাটা সবে আমি দেখে বেরোলাম- ওর সাথে প্রস্রাবের সম্পর্ক দূর-দূরান্তে নেই। ওটা পি (Pee) নয়, পাই (Pi)তা ভদ্রলোককে না হয় ক্ষমাঘেন্না করে দেওয়া গেলো, হতে পারে অঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, বা ওই নম্বরটির ‘জীবন’ নিয়ে সিনেমা হতে পারে, সেটা কল্পনাতেও আনতে পারেননি। আমি চাইলেই, “সেকি, পাই শোনেননি?” বলে নাক উঁচু করতেই পারি, কিন্তু তাতে নাকের ডগা চিলে খেয়ে যাবে।

কিন্তু ওই যে, ‘বই’! ওটিতো অত সহজে হজম হওয়ার নয় চাঁদ! যে কোন সিনেমাই বঙ্গ-লেহনে ‘বই’ হয়ে গেলে তা আমার পেটে তোতার পেটের মতোই গজগজ করে, হজম হয়না। তার জন্যে সত্যবাবু দায়ী। ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ বইটিতে পোস্কার করে কয়েচেন, বাঙালি সিনেমা বলতে বুঝতো শরৎবাবুর গপ্পো- তাই সিনেমা আর বই চিরকালের মতো গুলিয়ে চুরমুর হয়ে গেছে। কিন্তু সত্যি বলতে, এই ওব্যেসটা যে কতটা ক্ষতিকর, তা ভদ্রলোকের কথা শুনে বুঝলাম। Life of Piসত্যিই ভাল বই হয়েছে। বছর দশেক আগেই সেটা গোটা দুনিয়ার লোকে জানতে পেরেছে, বুকার পুরস্কারটি বগলদাবা করার সঙ্গে সঙ্গে। তাই, “বইটা দেখলাম, বেশ হয়েছে...” বললে, ঘরপোড়া, থুড়ি, বিদগ্ধ পাঠক ভাববেন, অ, বুজি থান-ইট বইডার কতা কয়েসে। ভাবুন তো, কি বিচ্ছিরি ভুল বোঝাবুঝি!
সে যাকগে। অনেকক্ষণ তবলা বাঁধলাম, এবার বোল তোলা যাক। প্রথমে ছোট করে বলি। বইটা, থুড়ি, থুত্থুড়ি, সিনেমাটা (কি ছোঁয়াচে রোগ বলুন তো!) দেখে বহু, বহুদিন পরে আবার সিনেমাহলের মজা বুঝলাম।

ভাল স্পেশাল এফেক্ট বিশেষ দেখিনা ভেবে নাক সিটকোবেন না। আমি ঘাগু মাল।

Wednesday, October 17, 2012

P. N. পিসি



তুই-আমি নিশ্চুপ, কথা বলছে আমাদের বন্ধুরা, আমাদের গলায়
তোর অজান্তেই আমি এক গ্রীক রাক্ষস হয়ে গেছি-
কথা বেরোচ্ছে না, বেরোচ্ছে কাইমেরা মুখ-নিসৃত গরল- জ্বালা ধরানো, মন পোড়ানো
তবু তোর নেশা হচ্ছে, তবু লোক ভোলানো, চিনি-গোলা কথার জাল কেটে
কালো কাক উড়ে গেলো অবিন্যস্ত পরিচিতদের খোলসে ঠোকর দিতে।
কার কথা ভেবেছিলি কারগিল ঘোষণার আগে?
“চেহ্‌রা তেরা অউর চাঁদ মেরি” বলে কার মুর্দাফরাস হয়েছিলি, ভার্চুয়াল?
ওই ছুতোরের বাচ্চা বলেছিলো চড় খেয়ে আরেকটা গাল পেতে দিতে,
তার বদলে গাল দিলি?
গালিলিও-ও মেনেছিলো, কর্তৃপক্ষ গলায় বাঁশ দিয়ে আখের রস বের করেছিলো-
তা বলে কি আর নিন্দে লুকিয়েছিলো, পেটের ওমে? ঠিকই জগৎ জুড়ে গাল পাড়ছে
সমগ্র বিজ্ঞান-সন্ততি, চর্চা করছে চার্চের।
আমি-তুই নগণ্য, তাই কাউকে বলিনি, গাল টিপতে আর দিতে একইরকম ভাল লাগে।
সেই ভরসা বুকে নিয়ে, রাস্তার প্রতিটি বাড়ির প্রতি তলায়, কেউ না কেউ,
“ওর ভালর জন্যেই” বলে পরনিন্দে করছে...

গ্লোবাল ওয়ার্মিং মানে কি? দুনিয়ায় পোকার সংখ্যা বেড়ে চলা?

অসুখ-বিসুখ



একটা মজার গল্প শুনবেন? মানে, মজা কতটা লাগবে জানিনা, তবে গল্পটা অনেকটা সত্যি, আর বেশ গোলমেলে। শেষ অবধি মজা পেয়ে গেলে আমাকেই দোষ দেবেন ’খন। গল্পের চরিত্রদের নাম বদলেই দিচ্ছি- প্রায় সত্যি ঘটনা কিনা!

পূর্ব ভারতের একটা বড় শহর। খুব বেশি বড় নয়, তবে পুরনো হওয়ার সুবাদে জনসংখ্যা সহ্যের থেকে বেশি। ঘিঞ্জি, অল্প নোংরা- কিন্তু তার জন্য কি আর লোকসংখ্যা কমেছে কোনকালে ভারতে? তা, সেই শহরে অনেক ডাক্তার। নানা বিষয়ের, নানা রোগের বিশেষজ্ঞ পুরনো, নতুন, কচি, পোড়খাওয়া- পুরো বর্ণালী পাওয়া যায় এখানে। আশপাশের বিরাট বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোন ভাল হাসপাতাল নেই- এদিকে এখানে একটা ডাক্তারি কলেজ পর্যন্ত রয়েছে। রুটির ওপর ব্যাঙের ছাতার মতো তাই নিশ্চিতভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ওষুধের দোকান- ভাল কথায় কেমিস্ট, ফার্মাসিস্ট, প্যাথোলজি ল্যাব এটা-সেটা-রা এটা-সেটা-রা।

এগুলো হলো সেই সব জিনিস, যা জনগণের চোখের সামনে থাকে। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজার যাওয়ার সময় নতুন গজিয়ে ওঠা দু’টো ওষুধের দোকান দেখে কাকা-জ্যাঠারা মন্তব্য করেন-“এত ডাক্তার, এত দোকান- কিন্তু তিন বছর ধরে কোমরের ব্যথার চিকিচ্ছে করতে পারলো না ব্যাটারা- চোরের দল সব”। অথবা, “দেখছিস কি? এই হচ্ছে গ্লোবালাইজেশনের ফল, বুঝলি! আমাদের ছোটবেলায় হরেনপিসে দুটো-চারটে গুলি দিয়ে দিতেন, একদিনে চাঙ্গা। এখন? পুরো পেনশন শেষ হয়ে যাবে, তবু শরীর ঠিক হয় না মড়া!”। এসব কথা কতটা অভিজ্ঞতার ফল আর কতটা বিরক্তির বিষ- সে নিয়ে তর্কে না ঢুকেই এটুকু বলা যায়, যে এ সমস্তই হিমশৈলের উপরেরটুকু মাত্র।

চোখে যা দেখা যায়না, তার অনেক রকম, অনেক গড়ন। গল্পকে মহাভারত না বানিয়ে আমরা তাই ততটুকু বলবো, যা গল্পের প্রয়োজনে লাগে।

Sunday, September 23, 2012

ঘুরতে গিয়ে**


বছর তিনেক আগের কথা...
আমরা যখন রেল-জংশন পিছনদিকে ফেলে রেখে, মস্ত মস্ত গাড়ি বোঝাই বন্য-সীমা লক্ষ্য করে পথ চলেছি - পেটের ভিতর নিউ আলিপুর দুয়ার থেকে খেয়ে আসা কচি পাঁঠার খয়েরি ঝোলের খলবলানি – ঠিক সে সময় সুয্যিমামা ক্লান্ত দেহে পশ্চিমে পিঠ হেলান দিয়ে লালচে হলেন; আমরা তখন বছর পঁচিশ বয়স নিয়ে তরতাজা আর উদ্ধত-প্রাণ জনা-দশেক যুবী-যুবা শহর-গন্ধী ছুটির মেজাজ সঙ্গে নিয়ে জংলি হলাম।


জয়ন্তী যে ঠিক একটা নদী, তা নয়- অভিজ্ঞতা। সামনে বিশাল পাহাড়শ্রেণী দিক থেকে দিক আড়াল করে কোল পেতেছে। সেই প্রসারে মাতাল হয়ে হিমালয়ের দুলালী আর রগচটা মেয়ে জয়ন্তী, তার খামখেয়ালী হৃদয়খানা সমতলের উদার বুকে উজাড় করে পোষ মেনেছে। ঝিরঝির আর কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে দেদার জলে মাখামাখি পাহাড়-মেয়ের অভিমান আর এই আমাদের অতি কষ্টে কাজের থেকে তিল তিল করে জমিয়ে তোলা ছোট্ট ছুটির সন্ধেটুকু।

Friday, September 7, 2012

Dionysus এর দাক্ষিণ্যে

সপ্তাহান্তে জমায়েত হয়েছে আদ্যিকালের মেসে। ছেলে-মেয়ে মিলে সংখ্যা অনেক। ওই অঞ্চলে টানা দশ বছর কাটানো উপলক্ষে রাতভর পার্টি। আনুষঙ্গিক ফুর্তিফার্তায় ডায়োনাইসাসের কৃপাও রয়েছে পুরোদস্তুর। তা, ভোর এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভট দাবী-দাওয়াও বাড়ছে বৈকি সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। নির্মাল্য দাবী করলো- ‘পদ্য লেখা কম্পিটিশন হোক...’ শুনেই অধিকাংশ সদস্য ঝিমিয়ে পড়লো। একজন অবস্থা বুঝে বার খাওয়ালো- ‘তোরাই লেখ- আমরা ভাল-মন্দ বিচার করি...’ অবশেষে মুরগি পড়ে থাকলাম দু’জন- নিমু আর আমি। নিমু বলল, আমার বিষয় হবে ‘হতাশা’; আমি ওকে বিষয় দিলাম- ‘খিস্তি’। পরের দিন জানতে পারি- স্টার্ট বলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নাকি ঝড়ের গতিতে লেখা শুরু করি। লেখা শেষ মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই। প্রথমে নির্মাল্য পড়ে শোনায়, তারপর আমি। এখন স্বীকার করতে লজ্জা নেই- নিজেরটাই ভালো করে বুঝতে পারিনি- নিমুরটা কি বুঝবো!
সব হয়ে যাওয়ার পর অরুণাভ (যে কিনা তার আগে অবধি মাটিতে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিল) জড়ানো গলায় গম্ভীরভাবে বলল- ‘কেউ জেতেনি, কেউ হারেনি, জিতেছে কবিতা’। আমার ধারণা, আমরা যতক্ষণ লিখছিলাম, তখন, ও কি বলবে তার মকশো করছিলো। সে যাক গে, কি ছাইপাঁশ লিখলাম আমরা? এই যে-


Monday, September 3, 2012

চেলুভি* (তাৎক্ষণিক -- ১২)

ছবি: সৈকত
অভি, তুমি মান করেছো?
দেখো, তোমার নামের ফুলে
সারা জঙ্গল ভরে ফেলে-
গাছ হয়ে গেলো নারী
কেন জোছনা করলো আড়ি
কেন মান রাখলো না মনমোহিনী
মান শুধু কেন, কথাও রাখেনি
ভরা কলসের অন্তর খালি
নিছক তামাশা করে বনমালী
সমস্ত খেলা মাটি হলো, অভি-
গাছ থেকে কাঠ হয়েছে চেলুভি
আর কেন মান, শৃঙ্গসমান
কান্না ধোয়াবে সব অভিমান-
প্রেমিকা-শরীর দু’হাতে বয়ে,
শুধুই কাঁদবে, কবি?
*******************************
চেলুভি

Sunday, September 2, 2012

তাৎক্ষণিক -- ১০,১১


এক মেস
এক দল
দশ সন
শত কথা;
দু’টো প্রশ্নে
ভয় হয়-
আরো দশ
কোথায় কে?
কেন দশ-
আমরা কি
এগোইনি?


কান চাই? পথে খোঁজো

নুড়ি পাবে, কড়িও
প্রাপ্তির খেরো খাতা
বাবাকেই শুনিও
দায় কার, কে তোমার
শ্রোতা, তার খোঁজ ঠিক
করলেই, উত্তর
দিয়ে যাবে পাবলিক।
ব্যথা পাবে, শুনে রাখো
মোটে দাম পাবে না-
অনুভূতি রবাহূত
কাজে কিছু লাগে না।

Tuesday, August 21, 2012

আজ দুপুর - তাজপুর


এ মহাজীবন, এ মরা দিনেও
শুদ্ধ করলো কিছু কালিমা।
পাঁচেক বাঁদর, সাগরকিশোর,
সঙ্গী নোনতা তিন পরমা।
ক্ষণজন্মের অভিশাপ নিয়ে
এই গোটা দিন শেষ তো হবেই।
একে অন্যকে বুকে মেখে নিয়ে
ঢেউ-মানুষের সিক্ত লড়াই।
অনাদি তো নয়, অনন্ত ধারা
স্ট্রোবোস্কোপিক সিমেট্রি পারা;
ঘোলা ঢেউ, তুই ধুয়ে দিয়ে যা,
যত সঙ্কোচ, যত ঝঞ্ঝা
তোর বুকে আজ দিয়ে যাবো ঠিক
ভেজা স্যান্ডেল, হারানো পিনিক
আজন্ম তোকে দেখবো বলেই
ভেড়িমুখ সব রাস্তা খুলে-
শোয়ানো বিলাস, বালি কিচকিচ
বিয়ারে ভেজানো তাজপুর বিচ।
কোন কুক্ষণে জন্মেছিলাম
কার অভিশাপ, কোন অপমান-
কোন যুদ্ধের পরিতাপ মেখে
ভ্রূণমুখে তোর দুগ্ধ নিলাম।

অনন্ত আজ ছিঁড়লো আমায়
শঙ্কিত এক ফার্ণ-কণা
সামনে সাগর, নোনতা ফেনা
অকিঞ্চিতের কি যন্ত্রণা!
অসম্ভবের ঘোলাটে জল
অযাচিতের অনন্ত ঢেউ
এর ভাগে চার, ওর ভাগে পাঁচ
ভুগলো সবাই, গুণলো না কেউ
নীলচে সাদা স্বপ্ন বুনে
দিগন্ত-ঘের সে কল্পনায়
সমুদ্র তার মূল্য ধরে-
আমার সিকি, তোর আটানা।






**********************************************
৬ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত

Tuesday, August 14, 2012

অন্দরে, কোণে-


হাত, কোমর, কপাল জুড়ে
কড়া, আঁচল, ঘাম।
শতবর্ষের গৃহযুদ্ধে এখনো তোমার
অস্ত্র বলতে ‘খেতে আয়’ আর চায়ের কাপ।
প্রায়-দিনই দৌড় হয়,
সূর্যাস্ত আর তোমার খাওয়ায়-
সূর্য হারে।
সকলের খাওয়া-দাওয়া,
চাওয়া-পাওয়া মিটিয়ে দিন গেলে কি পাও?
জেনারেশন গ্যাপ?
বদরাগী বলেন, ‘আমার বাড়ি’
পেটের রুগী বলে, ‘আমার জীবন’-
সমান পাত্তা দাও।
তোমাকেই বলে, তবু
তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না?
কে জানে, এদ্দিনের অভিজ্ঞতায় বুঝে নিশ্চয়ই ফেলেছো,
প্লেট- গ্লাস ভাঙে, জুড়েও যায়
লোকে আবার তাতে খাবার খায়
শুধু আঠাকে কেউ কখনো ‘ধন্যবাদ’ বলেনি।

খালি আমি জানি,
রান্নাঘরের অন্ধ কোণে,
দিন, বয়স আর অন্ত গোনে
আন্তিগোনে।

Sunday, August 12, 2012

মেদিনী...



তুই    মা জননী-

তুই    প্রীতিলতা-
তুই    মায়ার শেকলে বাঁধা যৌনতা-
তুই    শতবিষে জর্জর,
গৃহপাল তস্কর-
জং ধরা শৃঙ্খল- নিপীড়িতা।

তুই    উন্মুখ পিঠ পেতে নায়কের শৈশব,
উদ্ধত যৌবন, উদ্ভট কলরব,
সহিংস শ্বাপদের বিকৃতি উদ্ভব
ক্ষমাশীল দেহ মেলে সয়েছিস-

ওই    শোণিতে শোণিতে খোঁড়া, খনিতে খনিতে ভরা
প্রলুব্ধ লেহনের ক্ষতচিহ্নিত ধরা-
অনন্ত যৌবন-মিশ্রিত সোমরস
উদ্বৃত্তের নামে ভরা স্বর্ণকলস
নিরলস অপচয় করেছিস

ক্রমে    সহ্যের সীমা ছেড়ে দানবিক লোভ
তোলে    মধ্যবয়সী দেহে তোর বিক্ষোভ
আর    সয় না, সয় না, প্রিয়ে তোর অপমান-
দ্যাখ্‌    ধর্ষক হল তোর স্বামী-সন্তান-
কেন    আজও বহমান তোর এ অত্যাচার...

মেদিনী, মেডিয়া হও, দোহাই তোমার!

Saturday, August 11, 2012

সফেদ...


ছোটখাটো গড়নের, বেগুনী চুলের মেয়ে
কবিতা লিখতো বসে, ভালবেসে, আদরে
নীল জল ছলকাত সাদা পাথরের গায়ে
আলসিয়াসের গান পাক খেত সাগরে।
সূর্যাস্তের সাথে বন্ধুনী সমাগম
পানীয়ের গ্লাসে ভেজা আঙুলের যাতায়াত
কামনায় বাঁধ নেই, ভালবাসা জঙ্গম
পায়রার ডানা ঢাকে অলিভের মৌতাত।

যাবে নাকি সেখানে, কালস্রোত সাঁতরে?
বুভুক্ষু কুকুরের ভয় পেতে হবে না
যন্ত্রচক্ষু নেই, হা-ভাতে বা হা-ঘরে
নির্বোধ, মৃত মানসিকতার বিচারে
শ্রেণীভুক্ত করার অদম্য বাসনা-
কেউ টিপে দেখবেনা- কোন দল, কোন জাত
পরীক্ষা নেই কোন- মনের বা শারিরীক
ধুয়ে দেবে সখীদল গ্লানি সব- গুঞ্জায়
আঁকড়ে ধরতে দেবে, যেমনটি মন চায়
পোড়া মুখে লাথি মেরে যাবে, মিস প্রামাণিক?

******************************************
৪ মাত্রা। মাত্রাবৃত্ত

Friday, August 10, 2012

এত ভয় পাস?


তোর         পুতুলখেলার যদি না থাকে সাহস
যদি          শৈশব-কান্নায় তোকে চমকায়
যদি          আতঙ্কে যায় ক্ষণ-দিন-মধুমাস
যদি          প্রসবেদনার ভয়ে ঘুম ভেঙে যায়
তবে          হেঁকে নিস, ডেকে নিস নিশ্চিন্তে
তোর         ব্যালকনি, ঘর, ছাদ, সিঁড়ির তলায়
জানি         ললনারা নির্ভুল লোক চিনতে-
জানি         এই পথ বাঁক নেবে ছাদনাতলায়।
এর           পর থেকে শুরু হবে রঙ-তামাশা
তুই           মা-জননী, আমি তোর বৃদ্ধ শিশু,
আমি         অয়দিপাউস, আমি বং-বাতাসা
তোর         আকণ্ঠ সোহাগের ‘পাগলা দাশু’।
আর          কেনই বা ট্যাঁট্যাঁ গান, নিশিজাগরণ
কেন          স্বাস্থ্যকে বেমালুম বিদায় দিবি?
তার          চেয়ে একে অন্যের ভরণপোষণ
এক          আয়নায় দু’জনের দুই পৃথিবী?

তবু           ঘুম নেই, ভাবনায় ঘন কুয়াশা
পাছে         নিশি ডাকে সাড়া দিস, ছন্দপতন
যদি          মন-হরমোন-সন্তান-পিপাসা
যদি          ক্রন্দসী ভরে ফেলে তোর ক্রন্দন?

***************************************
৪ মাত্রা। মাত্রাবৃত্ত

Monday, August 6, 2012

ওর পিয়া...


প্রেমিকা রসাতলে
গিয়েছে অবহেলে
একা দাঁড়িয়ে আছি পাহারাদার।
আমার অনুযোগ
ওজনে মাপা হোক
এটুকু মেনে নিতে পারছো না?

সে গেল মাঝ-নদী
আমাকে নিতো যদি
'Cool' তো রাখতামই, শ্যামও নির্ঘাৎ!
বদলে ফাঁকি দিলো
নরকে উঁকি দিলো
যুক্তি স্বাধীনতা, আসলে অজুহাত।

আমিও আদেখলে
নিলাজ ব্যাটাছেলে
মাটিতে ভাত বাড়ি, কবরে এক পা-
ধান্দা প্রতিশোধ
জগৎ নির্বোধ
পরালো প্রেমিকের মহৎ শিরোপা।

সাজানো গান গেয়ে
বেসুরো পর্দায়
মিথ্যে বিরহের পেঁচানো কাঁদুনি
এমন দুর্দিন
ব্রথেল মালকিন
কর্মজীবনে কখনো দেখেনি।

প্রেমিকা চোখ মেলে
দাঁড়ালো দোর খুলে
ধোঁয়াটে ঘর-জুড়ে নীল যাপন-
এ ঘুড়ি হাতখালি
চোখের কোণে বালি
একাই ফিরলাম, মুক্ত-মন।

****************************************************
৭ মাত্রা। মাত্রাবৃত্ত

কড়িকাঠুরে*


গুনছে কড়ি কড়িকাঠুরে
কাটবে বলেই, কাটা-ই পেশা
আগুনদামে বেচবে ভাবে
কড়িকাঠ, সাথে লুট-বাতাসা

ফেললো কড়ি, মাখলো সময়
বাদবাকি কাঠে ঘুণ ধরেনি
সে সব কেটে গড়লো হৃদয়
তুলে নিয়ে গেল প্রেমকুড়ুনি

নববর্ষার স্যাঁতানো কাঠে
জমলো শ্যাওলা-রঙের আশা
গুনছে সময় কাঠবেকারে
কাটাবে বলে, ওটাই পেশা...

********************************************************
*নামটা নেওয়া সচলায়তনের এক সদস্যের প্রোফাইল থেকে... অন্য কোন উৎস জানা নেই। 
স্বরবৃত্ত

Tuesday, July 24, 2012

অভিযোগ


-      সর্বক্ষণ অন্যের কথা ভাবতে, শুনতে, বলতে আর ভাল লাগেনা। কে কোথায় কার স্বাধীনতা কেড়ে নিলো, কে কবে কার ওপর অত্যাচার করলো, কোথায় কোন নক্ষত্রে ক’টা টিকটিকি দেখা গেছে, সেই নিয়ে আলাপ, প্রলাপ, বিলাপ, আলোচনা, প্রস্তাবনা, সমালোচনা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, দুর্গন্ধ – আর ভাল লাগেনা। আর ভাল লাগেনা এত শব্দ। শব্দ-কল্পদ্রুম মানে অনেক পরে বুঝেছি। ওর মানে কেউ বাজে শব্দ করলে কল্পনা করা যে তার মাথায় দুড়ুম করে হাতুড়ি বসিয়ে দিলাম। Anger Management এর দরকার হবে না, ওই দুড়ুম শব্দেই বেজায় হাসি পাবে। আমারও এখন তেমন ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে, কেউ একটু আমার কথা বলুক। কেউ না বললে অন্তত আমিই একটু নিজের কথা বলি। একটু নিজের পিঠ চাপড়ে দিই, নিজের কাঁধে মাথা রেখে একটু ঘুমোই। অন্য সক্কলের মতো আমিও নিজেকে ভালবাসি, কথাটা একবার অন্তত বলার মতো করে বলি। “প্রতিটি বলের সমান ও বিপরীতধর্মী বল দোকানে পাওয়া যায়” এর মতো করে নয়। কিছু নিখাদ সত্যি কথা আছে, যা জনসমক্ষে বলতে গেলেই আর মেরুদণ্ডে জোর পাওয়া যায় না।
-      যাহা শিরশির করে, তারে শিরদাঁড়া কয়।
-      নিজের কথাও ঠিক তাই। একদম বাচ্চারা ছাড়া

Sunday, July 8, 2012

Bite Sized (তাৎক্ষণিক - ৭, ৮, ৯)


পরিচয়, পরিমিত ভাল।

মিতভাষ

মিতালাপ

পরিশেষে, পরিমিতালী।



ঝিমঝিম, ঝিরঝির

সারাদিন টুপটাপ

বেহিসেবী অভিমান

বেয়াদব অনুরাগ–

তুমি আমি, আমি তুই,

নিরলস পিং পং

বাইরে বর্ষা আর

অন্দরে? সংসার।


সিলিংয়ে ঝুল, দেওয়ালে উই

জানি,

একদিন হবেই-

‘উই শ্যাল ওভারকাম’

দড়িতে টাঙ্গানো দড়ি দেওয়া জাঙ্গিয়া,

বাথরুমে শ্যাওলার রাজধানী

মাঝে

জনাচার

নিরলস

ভূ-ভার কাঁধে বসে আছে।


(Song of Ice and Fire)

রেওয়াজ রয়েছে

কিছু গরম পানীয় ঠাণ্ডা করে খাওয়ার।

এদিকে, মেয়েরা

বহুদিন

বোতল থেকে টুকছে।

Saturday, June 30, 2012

তাৎক্ষণিক-৬

কিছু কথা কেউ জানে না

জানে, মন-

কিছু প্রেম জমে ক্ষীর হয় তবু

নীরস নেপো দিনান্তে দইটাই মারে,

কিছু ব্যথা বুকে বাজে

বাকি সব গান হয়ে বাজবে বেতারে

কিছু ইঙ্গিত একান্তই তোমার, জানেমন...

কিছু কথা কেউ জানে না

জানে, মন...

Wednesday, June 20, 2012

বুড়ো কুকুর

“...আমিও কেমন কুকুর হয়ে গেছি
চাটার আগে শুঁকে দেখছি তোমায়...” -- শ্রীজাত

স্বাগতা চা বা কফি খেয়ে আসার পর ওকে চুমু খেতে খুব ভালো লাগে অমিতের। স্বাগতা বলে flavored kiss। অল্প কিছু আশ্লেষ, তারপরেই খাট- খেলার মাঠ।

বর্ষা এসে গেছে বেশ কিছুদিন হলো। পরিবেশ ঠাণ্ডা। সন্ধের পর থেকে মাঝে মাঝে ব্যাঙের ডাক শোনা যায়। শহরতলী বলে এখনো পাঁচ-দশটা উভচর টিকে আছে। একে ঝির ঝির করে বৃষ্টি, তায় নতুন বাড়িতে পাতা আনকোরা সংসার। সন্ধের পর কোনদিনই ওদের বাড়িতে কেউ আসে না। রাতে স্বাগতা ঘুমোয় আর অমিত ইন্টারনেটে দেশোদ্ধার করে। তাই এইটাই ওদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার একমাত্র সময়।

আজ ব্যাপার আরও গুরুতর। বারোদিনের অন-সাইট ডিউটি শেষ করে আজ সকালেই বাড়ি ফিরেছে অমিত। যখন বাড়িতে ঢুকেছে, স্বাগতা তার আগেই ওদের এন.জি.ও র উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিলো। ফিরেছে বিকেল ৩টে নাগাদ। ফলতঃ তার পর থেকে ঘনঘন নিজেদের মধ্যে আমিষ দৃষ্টি দেওয়া নেওয়া হচ্ছিলো। নেহাত কাজের মাসি ওই সময়েই আসে, তাই–

সাড়ে ছ’টায় দু’কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এলো যখন স্বাগতা, ততক্ষণে বাইরে ঝমঝম করে শুরু হয়ে গেছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে

Thursday, June 14, 2012

তাৎক্ষণিক - ৫

যারা ঠাণ্ডা আগুন জ্বাললো-
পেটে খিদের দাঙ্গা পেরিয়ে

যার খাতার পাতায় অক্ষর
আর মাথার মধ্যে কারগিল

যারা পিত্তি গুলেছে চুম্বনে
আর শক্তি দিয়েছে বন্ধন

ওরা পেলো না কখনো শান্তি
ওরা নিজেই নিজের বাস্তিল

তাই কবিতা লিখেই উড্ডীন
আর শব্দ-সৃজনে শান্তি

খুঁজে আলোর দরজা আজীবন
শেষে কালো অক্ষরে মুক্তি...

Wednesday, June 6, 2012

ঠাণ্ডা- লাভা

1

স্ট্রবেরী ওয়াইল্ড অর্থাৎ বুনো হলে তার স্বাদ বেড়ে যায় কে জানতো? বিশেষ করে তা যখন পাওয়া যায় এমন এক রাস্তার ধারে, যা বরাবর চলতে চলতে মাঝে মধ্যেই মনে নিকো পার্কের বাচ্চা রোলার-কোস্টারের কথা উঁকি দিয়ে যায়? হলুদ রঙের এবড়ো খেবড়ো ওই ফলগুলোকে স্ট্রবেরী বলে মানতে বেজায় আপত্তি থাকলেও মুশকো জোয়ান ড্রাইভার (যার হাতে প্রাণের জিম্মা দিয়ে চলেছি পাঁচ ভেতো বাঙালি) জোর দিয়ে বললো যখন- আপত্তি করে কার বাপের সাধ্যি? পরে দেশে ফিরে দেখি ওগুলোকে সত্যিই ভারতীয় স্ট্রবেরী (Mock Strawberry) বলে- এই দেখুন। তবে গল্পটায় অনেক এগিয়ে গেছি, তার আগের কিছু ঘটনা না বলে নিলে আপনারা থই পাবেন না।

মাত্র দু’দিনের তোড়জোড়ে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম আমরা চাট্টি অরুণ এবং একজন কিরণমালা। লক্ষ্য- কলকাতার প্লাস্টিক ব্যাগটা থেকে বেরিয়ে একটু দম নিয়ে আসা- সম্ভব হলে ঠাণ্ডা কোথাও। কিভাবে কি করেছি, তার বিবরণ পরেই দেবো’খন (আপনাদের সুবিধের জন্যেই), আপাতত ধরে নিন,

Friday, June 1, 2012

সাধারণ্য

“I can’t take my eyes off you…”—Damien Rice

ভেবে বসবেন না যেন, আবার একটা কবর-পচা প্রেমের গল্প বলতে বসেছি। নাঃ, প্রেম নয়, উপরের লাইনটা মনে পড়লো এক ইংরেজি সিরিয়ালের কথা ভেবে। আমার আর আমার কাছে-দূরের বন্ধু-বান্ধবের অনেকেরই এটা দেখা, হয়তো আপনারও। না দেখা থাকলে দেখে নিতেই অনুরোধ করবো। নাম? বলবো, বলবো... দাঁড়ান, অতো তাড়া কিসের? আগে স্বজাতির অভ্যাস মেনে একটু discourse (সহজ করে, ভাট) করে নেওয়া যাক।

আমরা সকলেই কম বেশি বুদ্ধিজীবী তো, মানে বুদ্ধি খাটিয়ে খাই (রান্না করতেও যে ঠিক কতটা বুদ্ধি লাগে, সেটা যে করেনি, জানেনা), তাই আমাদের নিজেদের প্রতি একটা স্বাভাবিক দায়িত্ব থাকে, একটু আলাদা হওয়ার, হট্‌কে হওয়ার। আমরা বিয়ে বাড়িতে একটু ‘অন্যরকম’ সাজতে পছন্দ করি; যারা একটু আলাদা, তাদের ভালো-মন্দ যাই হোক, গুরুত্ব দিই; আমাদের পড়াশুনো, গান-বাজনা, মতাদর্শ, কিছু একটা বাকিদের থেকে আলাদা রকম হলে সেটা নিজের কাছে গর্বের ব্যাপার হয়। “সে কি রে? এই গানটা শুনিসনি?” বলতে অপছন্দ করে, এমন খুব কম লোক আছেন মনে হয়। তা, সেটা খুব ভালো একটা ব্যাপার। ভাগ্যিস! নইলে শিখতামই বা কোথা থেকে, আর প্রাণভরে তর্কই বা করতাম কার সাথে- সবই এই আলাদা হওয়ার গুণেই তো!

কিন্তু, মজাটা হয়, যখন,

Tuesday, May 15, 2012

মিথ্যে-বিপ্লব

গল্প দিয়ে ভুল করেছি, কেতাবি বিশ্রাম

কথার ভিতর কামড় ছিল, কমই ছিল দাম

গরম কিছু কথার আঁচে শুকিয়ে ভেজা কাক

হাঁক দিয়েছি, ‘কোথাও থেকে শঙ্করাকে ডাক-’

সভ্য ছিলাম, সভ্য আছি, ভদ্র আমার মিথ্যে-

মিথ্যে-পিঠে মিথ্যে চলে মিথ্যে চাকার রথে;

মিথ্যে ভেঙ্গে সত্য গড়ি বাঁশ বাগানের মাথায়

নিরাপত্তার ভেক ধরেছে প্রবঞ্চনার ছাতা

খুব ভাল যত মিথ্যে আছে তোমায় আমায় মিলে

এদ্দিনে সব সত্যি মেনেছি সংসার-তালগোলে

কতটা ঠিক মিল রয়েছে মিথ্যেয় আর বিপ্লবে?

পিছনে লেগে থাকলে পরে দুটোই টেকে, ঠিক থাকে...


**************************************************
স্বরবৃত্ত

Friday, May 4, 2012

এ কার হাঁস?

“My mouth kept moving and my mind went dead
So, picking up the pieces, now where to begin?
The hardest part of ending Is starting again!!” –Linkin Park

পিছনে দেওয়াল ভেজা
রোদ্দুর পিঠে

স্যাঁতস্যাঁতে গরাদের
জানালায় ছায়া

জগৎ আলোকস্নাত
মায়াময়, মিঠে,


খেতে দিতে ভুলে গ্যাছো?
তোমাদের দয়া-

যুদ্ধে হরেক সচ্‌
সাতটাকা পিস

পাইকারি কিনে নিয়ে
খুচরোয় বেচি

আমাকে কিনেছো তবে
জানোনা কি চিজ্‌

গুড়ে ঢালি বালি আর
বাড়া ভাতে মাছি।

নিজেকে সিংহ ভেবে
কতদিন আর,

ভেড়া-লোম সাদা হলো
পিনিকের টানে

ডানাজোড়া মোম গুলে
ইকারাস-ওড়া

হিংসেয় হাসি দিই
প্রতিবাদ? গানে...

ঘর মানে কারাঘর,
উড়ছি তো তবু

না হয় ধাক্কা খাবো
গরাদে-পাঁচিলে

স্বপ্ন বিক্রি হবে
ছিপ নেবে ব্যাঙে

আমায় অতলে ফেলে
মাছ নেবে চিলে-

হারছিনা কিছুতেই
হোক মনগড়া-

নিজেকে বিজয়ী ভেবে
তাসের আসন,

টলছে, ভাঙছে, তবু
নিভু নিভু জ্বলা-

কেউ আলো না জ্বালালে
থামা তো বারণ!


*********************************************
৪ মাত্রা। মাত্রাবৃত্ত

Saturday, April 28, 2012

কছুয়া জ্বালাও...

ব্যর্থতার জবাব ছিলো পিচিৎ করে কালি

পেনের মুখে কে যেন ফের মিশিয়ে দিলো চুন

ফিরিয়ে নেবো সে ভাবনার গুড় ভর্তি বালি

হাতে রইলো ফাউন্টেন আর কপালে আগুন।


‘পৃথিবী আমায় চায়’ বলে যেই কাটলে অন্য দেশে,

উত্থিত পেন, উন্মাদনায় ঝাঁপিয়ে তুলেছি ডায়েরি

বাউন্ডুলের দিনাতিপাত, দাঁতের গোড়ায় খয়েরি

বর-বগলে ফিরলে যেদিন, ‘বোন’ ডাকলাম হেসে।


নিরুদ্দেশ পাখায় পেলো যৌবনের মায়া

প্যাংলা হাতে যুদ্ধ জয়- স্বপ্ন-রঙা তুলি

দিন-বদলের ভূত নামালো পেট-ভর্তি হাওয়া

অবশেষে সেই ধর্মতলা, সেই কর্মখালি।


অন্য বোকা শহীদ হোক, আমরা থাকি আস্ত

যুদ্ধে হেরে, গঞ্জে ফিরে, ঘাম মুছলো চাষা-

মিলেনিয়াম সূর্য গেছে পাশ্চাত্যে অস্ত

এখনও ‘এক মচ্ছর’ থেকে কচ্ছপই ভরসা।


********************************************
৫ আর ৬ মাত্রার মিশ্র মাত্রাবৃত্ত

Friday, April 27, 2012

ইস্কাপনের বিবি

ইস্কাপনের বিবির এখন তিনটে সাহেব

তুরুপ নাকি বিরূপ তারা কেউ জানেনা

বৃথাই চেষ্টা করে তুমি মরছো নায়েব,

ভাদ্রমাসে সব কুকুরই মুক্ত-মনা।

ভাদ্র গেলো, চৈত্র এলো, ভরসা নিয়ে

এলাহী সেই বোঝার ভারে কেউটে-বোড়া

এক বাটিতেই মাংস খেলো, দুধ মাখিয়ে-

মাথার ওপর দুলছে কাস্তে-ফুলের তোড়া।

আম থেকে ফুল, সবার মুকুল ঝড়েই ওড়ে

রসিকতায় রুগ্ন যখন কালবোশেখী,

‘আলোকপ্রিয়’, মদন-বাণে সত্য পোড়ে

বিবির তালে বঙ্গ নাচে, আমরা দেখি।

বস্তি গেলেই স্বস্তি এসে উদার করে

মধ্যবিত্তে বন্দী মনের অন্ধ কুয়ো,

‘দেওয়াল’- জোড়া বিপ্লবে ঠিক হিল্লে হবে

তুমি কেবল ইঁদুর টিপে অংশ নিও-

হাড় শুকোলো জন্ম জন্ম হাড় দুলিয়ে

যেমন চাকরি- খুড়োর কলে মাইনে দোলে,

লেজ না থাকলে কুত্তার আছে কিই বা বলো?

‘দেওয়াল’- জোড়া পেচ্ছাপই তার পল্লীগীতি।


ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না, কিচ্ছুটি আর ভাল্লাগে না,

থাবড়ে দিতে ইচ্ছে করে, জলবিছুটি

ঘষেই দিতে ইচ্ছে করে; ইচ্ছে করে

যা ইচ্ছে তাই খিস্তি করি, খেলনাবাটি

উলটে-পালটে তাল পাকাতে ইচ্ছে করে;

দু’কান কাটা কুকুর হয়ে ঘুরছি দেখো

মাস্টার থেকে ছাত্র সবাই দেশদ্রোহী-

কার্টুন ছেড়ে এবার বরং ব্যানার আঁকো

লাশ ফেল্লেও মিলবে তোমার তল্পি-বাহী-

কি নির্লজ্জ! কি নির্লজ্জ! একবারটি

মুখ ফুটে তোর একটিবারও বের হলো না

ক্ষমা চাওয়া মাথায় থাকুক, দুঃখপ্রকাশ?

তোকে নারী বলতে গিয়ে বং-ললনা

লজ্জা পাচ্ছে, পাচ্ছি যেমন আমরা সবাই

তাসের বিবির ছলা-কলায় মুগ্ধ হয়ে

সম্মোহিত পাঁঠার মতো হলাম জবাই-

এবার যে কি প্রসাদ দিতে বসবে ভিয়েন

সে সব প্রমাদ কেউ গোনেনা, দরকার কি?

এর আগেই বা কত্তটুকুন ছিলাম ভালো?

মানুষ মেরে রক্ত মোছার সে বুজরুকি

সবাই জানে। দক্ষিণাকাশ ভীষণ কালো

ঠিক যতটা কালচে থাকে উত্তর দিক

লাল যা কিছু বিপ্লব ভেবে ভুল করেছি

তিরিশ বছর মাপতে যাইনি কি ভুল কি ঠিক

সে পাপ এখন গ্রেপ্তার হয়ে শোধ করছি

নির্বোধের এই শাস্তি নিলাম মাথায় পেতে

দল-বেদলের যুদ্ধে এবার যে চায় জিতুক

আমরা জানি ঘুমিয়ে নিতে আর ঝিমোতে

গর্দান চাও? কল্লা নামাও, রক্ত ছিটুক।