Tuesday, August 21, 2012

আজ দুপুর - তাজপুর


এ মহাজীবন, এ মরা দিনেও
শুদ্ধ করলো কিছু কালিমা।
পাঁচেক বাঁদর, সাগরকিশোর,
সঙ্গী নোনতা তিন পরমা।
ক্ষণজন্মের অভিশাপ নিয়ে
এই গোটা দিন শেষ তো হবেই।
একে অন্যকে বুকে মেখে নিয়ে
ঢেউ-মানুষের সিক্ত লড়াই।
অনাদি তো নয়, অনন্ত ধারা
স্ট্রোবোস্কোপিক সিমেট্রি পারা;
ঘোলা ঢেউ, তুই ধুয়ে দিয়ে যা,
যত সঙ্কোচ, যত ঝঞ্ঝা
তোর বুকে আজ দিয়ে যাবো ঠিক
ভেজা স্যান্ডেল, হারানো পিনিক
আজন্ম তোকে দেখবো বলেই
ভেড়িমুখ সব রাস্তা খুলে-
শোয়ানো বিলাস, বালি কিচকিচ
বিয়ারে ভেজানো তাজপুর বিচ।
কোন কুক্ষণে জন্মেছিলাম
কার অভিশাপ, কোন অপমান-
কোন যুদ্ধের পরিতাপ মেখে
ভ্রূণমুখে তোর দুগ্ধ নিলাম।

অনন্ত আজ ছিঁড়লো আমায়
শঙ্কিত এক ফার্ণ-কণা
সামনে সাগর, নোনতা ফেনা
অকিঞ্চিতের কি যন্ত্রণা!
অসম্ভবের ঘোলাটে জল
অযাচিতের অনন্ত ঢেউ
এর ভাগে চার, ওর ভাগে পাঁচ
ভুগলো সবাই, গুণলো না কেউ
নীলচে সাদা স্বপ্ন বুনে
দিগন্ত-ঘের সে কল্পনায়
সমুদ্র তার মূল্য ধরে-
আমার সিকি, তোর আটানা।






**********************************************
৬ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত

Tuesday, August 14, 2012

অন্দরে, কোণে-


হাত, কোমর, কপাল জুড়ে
কড়া, আঁচল, ঘাম।
শতবর্ষের গৃহযুদ্ধে এখনো তোমার
অস্ত্র বলতে ‘খেতে আয়’ আর চায়ের কাপ।
প্রায়-দিনই দৌড় হয়,
সূর্যাস্ত আর তোমার খাওয়ায়-
সূর্য হারে।
সকলের খাওয়া-দাওয়া,
চাওয়া-পাওয়া মিটিয়ে দিন গেলে কি পাও?
জেনারেশন গ্যাপ?
বদরাগী বলেন, ‘আমার বাড়ি’
পেটের রুগী বলে, ‘আমার জীবন’-
সমান পাত্তা দাও।
তোমাকেই বলে, তবু
তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না?
কে জানে, এদ্দিনের অভিজ্ঞতায় বুঝে নিশ্চয়ই ফেলেছো,
প্লেট- গ্লাস ভাঙে, জুড়েও যায়
লোকে আবার তাতে খাবার খায়
শুধু আঠাকে কেউ কখনো ‘ধন্যবাদ’ বলেনি।

খালি আমি জানি,
রান্নাঘরের অন্ধ কোণে,
দিন, বয়স আর অন্ত গোনে
আন্তিগোনে।

Sunday, August 12, 2012

মেদিনী...



তুই    মা জননী-

তুই    প্রীতিলতা-
তুই    মায়ার শেকলে বাঁধা যৌনতা-
তুই    শতবিষে জর্জর,
গৃহপাল তস্কর-
জং ধরা শৃঙ্খল- নিপীড়িতা।

তুই    উন্মুখ পিঠ পেতে নায়কের শৈশব,
উদ্ধত যৌবন, উদ্ভট কলরব,
সহিংস শ্বাপদের বিকৃতি উদ্ভব
ক্ষমাশীল দেহ মেলে সয়েছিস-

ওই    শোণিতে শোণিতে খোঁড়া, খনিতে খনিতে ভরা
প্রলুব্ধ লেহনের ক্ষতচিহ্নিত ধরা-
অনন্ত যৌবন-মিশ্রিত সোমরস
উদ্বৃত্তের নামে ভরা স্বর্ণকলস
নিরলস অপচয় করেছিস

ক্রমে    সহ্যের সীমা ছেড়ে দানবিক লোভ
তোলে    মধ্যবয়সী দেহে তোর বিক্ষোভ
আর    সয় না, সয় না, প্রিয়ে তোর অপমান-
দ্যাখ্‌    ধর্ষক হল তোর স্বামী-সন্তান-
কেন    আজও বহমান তোর এ অত্যাচার...

মেদিনী, মেডিয়া হও, দোহাই তোমার!

Saturday, August 11, 2012

সফেদ...


ছোটখাটো গড়নের, বেগুনী চুলের মেয়ে
কবিতা লিখতো বসে, ভালবেসে, আদরে
নীল জল ছলকাত সাদা পাথরের গায়ে
আলসিয়াসের গান পাক খেত সাগরে।
সূর্যাস্তের সাথে বন্ধুনী সমাগম
পানীয়ের গ্লাসে ভেজা আঙুলের যাতায়াত
কামনায় বাঁধ নেই, ভালবাসা জঙ্গম
পায়রার ডানা ঢাকে অলিভের মৌতাত।

যাবে নাকি সেখানে, কালস্রোত সাঁতরে?
বুভুক্ষু কুকুরের ভয় পেতে হবে না
যন্ত্রচক্ষু নেই, হা-ভাতে বা হা-ঘরে
নির্বোধ, মৃত মানসিকতার বিচারে
শ্রেণীভুক্ত করার অদম্য বাসনা-
কেউ টিপে দেখবেনা- কোন দল, কোন জাত
পরীক্ষা নেই কোন- মনের বা শারিরীক
ধুয়ে দেবে সখীদল গ্লানি সব- গুঞ্জায়
আঁকড়ে ধরতে দেবে, যেমনটি মন চায়
পোড়া মুখে লাথি মেরে যাবে, মিস প্রামাণিক?

******************************************
৪ মাত্রা। মাত্রাবৃত্ত

Friday, August 10, 2012

এত ভয় পাস?


তোর         পুতুলখেলার যদি না থাকে সাহস
যদি          শৈশব-কান্নায় তোকে চমকায়
যদি          আতঙ্কে যায় ক্ষণ-দিন-মধুমাস
যদি          প্রসবেদনার ভয়ে ঘুম ভেঙে যায়
তবে          হেঁকে নিস, ডেকে নিস নিশ্চিন্তে
তোর         ব্যালকনি, ঘর, ছাদ, সিঁড়ির তলায়
জানি         ললনারা নির্ভুল লোক চিনতে-
জানি         এই পথ বাঁক নেবে ছাদনাতলায়।
এর           পর থেকে শুরু হবে রঙ-তামাশা
তুই           মা-জননী, আমি তোর বৃদ্ধ শিশু,
আমি         অয়দিপাউস, আমি বং-বাতাসা
তোর         আকণ্ঠ সোহাগের ‘পাগলা দাশু’।
আর          কেনই বা ট্যাঁট্যাঁ গান, নিশিজাগরণ
কেন          স্বাস্থ্যকে বেমালুম বিদায় দিবি?
তার          চেয়ে একে অন্যের ভরণপোষণ
এক          আয়নায় দু’জনের দুই পৃথিবী?

তবু           ঘুম নেই, ভাবনায় ঘন কুয়াশা
পাছে         নিশি ডাকে সাড়া দিস, ছন্দপতন
যদি          মন-হরমোন-সন্তান-পিপাসা
যদি          ক্রন্দসী ভরে ফেলে তোর ক্রন্দন?

***************************************
৪ মাত্রা। মাত্রাবৃত্ত

Monday, August 6, 2012

ওর পিয়া...


প্রেমিকা রসাতলে
গিয়েছে অবহেলে
একা দাঁড়িয়ে আছি পাহারাদার।
আমার অনুযোগ
ওজনে মাপা হোক
এটুকু মেনে নিতে পারছো না?

সে গেল মাঝ-নদী
আমাকে নিতো যদি
'Cool' তো রাখতামই, শ্যামও নির্ঘাৎ!
বদলে ফাঁকি দিলো
নরকে উঁকি দিলো
যুক্তি স্বাধীনতা, আসলে অজুহাত।

আমিও আদেখলে
নিলাজ ব্যাটাছেলে
মাটিতে ভাত বাড়ি, কবরে এক পা-
ধান্দা প্রতিশোধ
জগৎ নির্বোধ
পরালো প্রেমিকের মহৎ শিরোপা।

সাজানো গান গেয়ে
বেসুরো পর্দায়
মিথ্যে বিরহের পেঁচানো কাঁদুনি
এমন দুর্দিন
ব্রথেল মালকিন
কর্মজীবনে কখনো দেখেনি।

প্রেমিকা চোখ মেলে
দাঁড়ালো দোর খুলে
ধোঁয়াটে ঘর-জুড়ে নীল যাপন-
এ ঘুড়ি হাতখালি
চোখের কোণে বালি
একাই ফিরলাম, মুক্ত-মন।

****************************************************
৭ মাত্রা। মাত্রাবৃত্ত

কড়িকাঠুরে*


গুনছে কড়ি কড়িকাঠুরে
কাটবে বলেই, কাটা-ই পেশা
আগুনদামে বেচবে ভাবে
কড়িকাঠ, সাথে লুট-বাতাসা

ফেললো কড়ি, মাখলো সময়
বাদবাকি কাঠে ঘুণ ধরেনি
সে সব কেটে গড়লো হৃদয়
তুলে নিয়ে গেল প্রেমকুড়ুনি

নববর্ষার স্যাঁতানো কাঠে
জমলো শ্যাওলা-রঙের আশা
গুনছে সময় কাঠবেকারে
কাটাবে বলে, ওটাই পেশা...

********************************************************
*নামটা নেওয়া সচলায়তনের এক সদস্যের প্রোফাইল থেকে... অন্য কোন উৎস জানা নেই। 
স্বরবৃত্ত