Monday, September 16, 2013

'Chennai Express'ions... 1


চেন্নাইতে আসা এক মাস হয়ে গেল। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, কাছাকাছি বাজার-হাট দেখে নেওয়া, কাজ করার ঘর, টেবিল আর কম্পিউটার পাওয়া সবই মোটামুটি হয়ে গেছে, বাকি বলতে একটা সাইকেল জোগাড় করা আর প্রথম চেকটা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে আসা। দ্বিতীয়টা করতে গেলে প্রথমটা দরকার বলে দু’টোর কোনটাই করবো করবো করে আর করা হয়ে উঠছে না। তবু যাকে বলে সেট্‌ল্‌ করে গেছি। একটা নবীনবরণ গোছের অনুষ্ঠানও হয়ে গেছে। সোজা কথায় আমি এখন পাকাপোক্ত দক্ষিণ-ভারতের বাসিন্দা। কেমন আছি, কোথায় আছি, সেই নিয়ে নিয়মিত গল্প করবো বলেই লিখতে বসা। এর থেকে বেশি আর কোন মহৎ উদ্দেশ্য নেই।

রাতের শেষ প্রহরে ট্রেন থেকে নেমে কাজের জায়গায় আসতে গিয়েই পরিষ্কার বুঝলাম, কেন আসার আগে এত লোকে এত শোক পালন করছিল। সত্যি, শোক পালন! “যা, এবার সারাদিন কি করে দোসা-ইডলি খেয়ে কাটাস দেখি!” থেকে শুরু করে “আর যাওয়ার জায়গা পেলে না! ব্যাঙ্গালোর গেলেও বুঝতাম... চেন্নাই! খুব খাজা জায়গা ভাই, সত্যি বলছি” পর্যন্ত কত কিই না শুনলাম। যেন শখ করে জায়গা বেছেছি! ভারত সরকার কেন যে ট্যুরিস্ট-স্পটগুলোয় দেখে দেখে ইন্সটিটিউট বানায় না, হুঁহ্‌– যাক্‌, সে আর দুঃখ করে কি হবে। সব মিলিয়ে বেশ খানিকটা ভয় ছিলই, তার উপরে ভাষার অসুবিধে। ভাসা ভাসা জানা ছিল যে বহুদিন যাবৎ এখানে হিন্দির বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধ ঘোষণা হয়েছে – তাই কেউই ও ভাষায় কথা বলে না। জানলেও বলে না। সে ঠিক আছে। তাহলে বলেটা কি? নিশ্চয়ই ইংরেজি? তাহলেও তো অসুবিধে নেই- চালিয়ে নেবো। এইসব ভেবে দুগ্‌গা বলে বেরিয়ে পড়েছিলাম। পৌঁছে কি দেখলাম?

Thursday, March 28, 2013

আ মোলো বাংলাভাষা


যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঘা যতীনের দিকে যেতে সুলেখা মোড় পেরিয়ে ডানদিকে একটা ‘ক্যাফে কফি ডে’র আউটলেট। বিকেলের দিকে প্রায় প্রতিদিনই ফাঁকা থাকে। স্বাভাবিক। অন্তত ইউনিভার্সিটির গড়পড়তা ছাত্র-ছাত্রীরা যে এখানে আসবে না, সেটা বলাই বাহুল্য। হাতখরচের টাকা বেশি খরচ করে খেতেই যদি হয়, তবে সামান্য দূরেই সাউথ সিটি আছে, বৈচিত্র্যের পসরা সাজিয়ে। এখানে আসে প্রধানত প্রেমী-যুগল – হয় ডাক্তারি, নয় ব্যবসার পিতৃদত্ত পয়সার মালিক, নয়তো নতুন প্রেমে পড়া মধ্যবিত্ত ছোকরা – ছোটবেলায় নচিকেতার ‘...মোটা মানিব্যাগ দেখে/ তোমাকে সাইডে রেখে/ দৌড়বে সোজা, সোজা দৌড়বে প্রেম...’ কথাটায় বেজায় ভয় পেয়ে তিনদিন টিফিন না খেয়ে জমানো টাকা উড়িয়ে মেয়েটিকে ইম্প্রেস করবে বলে, নয়তো মধ্যবয়স্কা নারীর দল – সমাজ বা প্যান্টালুন্‌স কিছু একটা উদ্ধার করে শরীর জুড়োতে আসা। এখানেই বসে গম্ভীর মুখে ল্যাপটপ খুলে দেশোদ্ধার করার ভান করছি। আসলে কিন্তু কান পড়ে আছে পাশের টেবিলে ট্যাঙ্ক-টপ আর হোঁৎকা বয়ফ্রেন্ডের অধিকারিণী চটকদার মেয়েটির কথার দিকে।

আজকের লেখার বিষয় এই কফিশপ-বিশ্বায়ন হতে পারতো – ‘আহা আমাদের কফি-হাউসের কি হবে গো!’ বলে চাড্ডি কান্নাকাটি করার সুযোগ থাকতো। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা কি করে তরুণ সমাজের পকেটের গভীরতায় প্রতিফলিত হয়, সে নিয়ে পাঁচ পাতা প্যাঁচানো যেত। এমন কি ওই হোঁৎকা ছেলেটির ক্রমবর্ধমান মেদপুঞ্জ আসলে কিভাবে মুক্ত-বাণিজ্যের ষড়যন্ত্র আর ষড়রিপুর ফল, সে নিয়েও কিছু বিদ্যে ফলানো যেত – কিন্তু এ সব মাটি করল ওই মেয়েটা। 

প্রথমে খেয়াল করিনি। আধা-ইংরেজি, আধা হিন্দিতে বকবক শুনে ভেবেছিলাম

ধুয়ে দাও হে

সত্য বৃষ্টি ঝরে ছাতা, ক্ষেত, ভিক্টোরিয়ায় 
সত্য সূর্য ওঠে আকাশী চাঁদোয়া ঘেরা মাঠে
মিথ্যে সমস্তই চাঁদের আলোর মায়াময়
ভোর হলে ঘোর কাটে, গোলাপি নেশারা বাড়ি যায়

জ্ঞানীরা আয়না ভেবে পারা ঘষে ফেলে দেওয়া কাচে
কলেজ শিশুর মুখে শিক্ষিত চূন লেগে পরিধেয় হয় 
সুশিক্ষা ফুল হয়ে জীবনের বৌভাতে লাগে
ঘোলা, অগভীর মনে, কিছু কথা কই হয়ে বাঁচে।

এখনো পড়েনি খুলে সমস্ত প্রসাধন, সব ধারণা-
উলঙ্গ অনুভূতি, দপদপে ধিক্কার, শরীরের শাক-চাপা আছে
বেশ্যা গালিও দেয়, অথচ সহজে কথা বলে
ঘোলামন, প্রসাধন ফেলে দিতে আমরা পারি না?