Saturday, April 28, 2012

কছুয়া জ্বালাও...

ব্যর্থতার জবাব ছিলো পিচিৎ করে কালি

পেনের মুখে কে যেন ফের মিশিয়ে দিলো চুন

ফিরিয়ে নেবো সে ভাবনার গুড় ভর্তি বালি

হাতে রইলো ফাউন্টেন আর কপালে আগুন।


‘পৃথিবী আমায় চায়’ বলে যেই কাটলে অন্য দেশে,

উত্থিত পেন, উন্মাদনায় ঝাঁপিয়ে তুলেছি ডায়েরি

বাউন্ডুলের দিনাতিপাত, দাঁতের গোড়ায় খয়েরি

বর-বগলে ফিরলে যেদিন, ‘বোন’ ডাকলাম হেসে।


নিরুদ্দেশ পাখায় পেলো যৌবনের মায়া

প্যাংলা হাতে যুদ্ধ জয়- স্বপ্ন-রঙা তুলি

দিন-বদলের ভূত নামালো পেট-ভর্তি হাওয়া

অবশেষে সেই ধর্মতলা, সেই কর্মখালি।


অন্য বোকা শহীদ হোক, আমরা থাকি আস্ত

যুদ্ধে হেরে, গঞ্জে ফিরে, ঘাম মুছলো চাষা-

মিলেনিয়াম সূর্য গেছে পাশ্চাত্যে অস্ত

এখনও ‘এক মচ্ছর’ থেকে কচ্ছপই ভরসা।


********************************************
৫ আর ৬ মাত্রার মিশ্র মাত্রাবৃত্ত

Friday, April 27, 2012

ইস্কাপনের বিবি

ইস্কাপনের বিবির এখন তিনটে সাহেব

তুরুপ নাকি বিরূপ তারা কেউ জানেনা

বৃথাই চেষ্টা করে তুমি মরছো নায়েব,

ভাদ্রমাসে সব কুকুরই মুক্ত-মনা।

ভাদ্র গেলো, চৈত্র এলো, ভরসা নিয়ে

এলাহী সেই বোঝার ভারে কেউটে-বোড়া

এক বাটিতেই মাংস খেলো, দুধ মাখিয়ে-

মাথার ওপর দুলছে কাস্তে-ফুলের তোড়া।

আম থেকে ফুল, সবার মুকুল ঝড়েই ওড়ে

রসিকতায় রুগ্ন যখন কালবোশেখী,

‘আলোকপ্রিয়’, মদন-বাণে সত্য পোড়ে

বিবির তালে বঙ্গ নাচে, আমরা দেখি।

বস্তি গেলেই স্বস্তি এসে উদার করে

মধ্যবিত্তে বন্দী মনের অন্ধ কুয়ো,

‘দেওয়াল’- জোড়া বিপ্লবে ঠিক হিল্লে হবে

তুমি কেবল ইঁদুর টিপে অংশ নিও-

হাড় শুকোলো জন্ম জন্ম হাড় দুলিয়ে

যেমন চাকরি- খুড়োর কলে মাইনে দোলে,

লেজ না থাকলে কুত্তার আছে কিই বা বলো?

‘দেওয়াল’- জোড়া পেচ্ছাপই তার পল্লীগীতি।


ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না, কিচ্ছুটি আর ভাল্লাগে না,

থাবড়ে দিতে ইচ্ছে করে, জলবিছুটি

ঘষেই দিতে ইচ্ছে করে; ইচ্ছে করে

যা ইচ্ছে তাই খিস্তি করি, খেলনাবাটি

উলটে-পালটে তাল পাকাতে ইচ্ছে করে;

দু’কান কাটা কুকুর হয়ে ঘুরছি দেখো

মাস্টার থেকে ছাত্র সবাই দেশদ্রোহী-

কার্টুন ছেড়ে এবার বরং ব্যানার আঁকো

লাশ ফেল্লেও মিলবে তোমার তল্পি-বাহী-

কি নির্লজ্জ! কি নির্লজ্জ! একবারটি

মুখ ফুটে তোর একটিবারও বের হলো না

ক্ষমা চাওয়া মাথায় থাকুক, দুঃখপ্রকাশ?

তোকে নারী বলতে গিয়ে বং-ললনা

লজ্জা পাচ্ছে, পাচ্ছি যেমন আমরা সবাই

তাসের বিবির ছলা-কলায় মুগ্ধ হয়ে

সম্মোহিত পাঁঠার মতো হলাম জবাই-

এবার যে কি প্রসাদ দিতে বসবে ভিয়েন

সে সব প্রমাদ কেউ গোনেনা, দরকার কি?

এর আগেই বা কত্তটুকুন ছিলাম ভালো?

মানুষ মেরে রক্ত মোছার সে বুজরুকি

সবাই জানে। দক্ষিণাকাশ ভীষণ কালো

ঠিক যতটা কালচে থাকে উত্তর দিক

লাল যা কিছু বিপ্লব ভেবে ভুল করেছি

তিরিশ বছর মাপতে যাইনি কি ভুল কি ঠিক

সে পাপ এখন গ্রেপ্তার হয়ে শোধ করছি

নির্বোধের এই শাস্তি নিলাম মাথায় পেতে

দল-বেদলের যুদ্ধে এবার যে চায় জিতুক

আমরা জানি ঘুমিয়ে নিতে আর ঝিমোতে

গর্দান চাও? কল্লা নামাও, রক্ত ছিটুক।

তাৎক্ষণিক - ৪

মিষ্টি মধুর, স্বপ্ন মেদুর খেলায় প্রেয়সী আমার জান

যদি হেলেফেলে বলো ফুটবল, কিংবা উলটো মদের বোতল

মাইরি বলছি, ফাউল করবো, খেলা ভেঙ্গে দিয়ে দেবো পিঠটান।

পুতুল খেলবো? বলছো?

ঘরে ট্যাঁ ট্যাঁ করে কাঁদবে?

মুখে চুষিকাঠি,

বগলে বিছুটি

গোটা-বারো মাস, বিছানায় ত্রাস

সঙ্গে করেই আনবে?

তবে খেলবো না, যাও-

আমার

বয়েই গিয়েছে খেলতে-

বয়ে যদি গেছে বেলা,

আর চাইনা বিপদে ফেলতে-

নিজের চরকা কমদামে কিনে, সুতো কেটে নিজে রাত্তিরে দিনে,

আমার চরণে নষ্ট না করে ওই ওখানেই দাও।

Sunday, April 22, 2012

তাৎক্ষণিক - ৩

তোকে ঝাপ্সা কাঁচের এপার থেকে দেখি,
তাই স্পষ্ট কথাও মিলিয়ে যাচ্ছে ওপারে-
মনের যে খাদ রওনা দিলো অতলে,
কখন যেন উঠলি সেটার কিনারে।
ওই খাদের ভয়ে ঝাঁপ দিয়েছি বালিশে
মুখ ঢেকে কোন গন্ধ থেকে বাঁচি-
জীবন গেলো নিরাপত্তার নালিশে
উপদ্রবেই কল্পনাতে কাঁচি-
প্লেটোর নাকি পুড়কি ছিলো খুব?
দিলাম তবে তার ওষুধেই ডুব...

তাৎক্ষণিক - ২

গতকাল মাঠে বসে
ভিনদেশী মিনসে,
জোর বাজি ধরেছিল
Greece এ, Pythagoras এ।
ধমকিয়ে বলি তাকে,
“শোনো তুমি দামড়া,
বোঝোনি কিছুই তুমি ভারতের মর্ম,
হয়েছিল এদেশেই ত্রিভুজের জন্ম-
Samosa বলত তাকে, এখন সে সিঙ্গাড়া...”

তাৎক্ষণিক - ১

Black&White বাঁদর তিনি, Hollywood এর চোখের মণি-
Lion-King এর গান না শুনে রাত্রে তিনি ঘুমোন না;
চলন-বলন অর্থহীন, আফ্রিকার ওই Cappuchin-
Ross কে বাহন করার পরে মাটিতে পা ফেলেন না।

ম্যাও

link
ভাঙা বেড়া ঘিরে ঘুরছে বেড়াল

চাটছে সুখে উলটে পড়া হাঁড়ি

কালো গতর ঘষছে টালির চালে

কাল এটাই ছিলো কারুর বাড়ি।

টুকরো বাঁশে দর্শন খোঁজে বেড়াল

মজন্তালি কি বেড়ালের নাম হয়?

নাম যাই হোক, ডাক ভুলেছে কবেই

এ স্তব্ধতার কারণ লাঠির ভয়।

ও ডাকছে না, ডাকবেও না তবু

ঢুকলো যারা কালো গাড়ির খোলে-

তাদের কেমন গজাচ্ছে গোঁফ, লোম

পিছনে লেজ, এদিকে বাচ্চা কোলে।

ভুতুড়ে বিল্লি-ডাকে প্রতিধ্বনি ওঠে

শুনতে পাওনি? তোমার কর্মফল

মজন্তালি বেড়ালের নাম নয়

এ সমস্তই ডেকে ওঠার ছল।

তাদের কেমন গজাচ্ছে গোঁফ, লোম

ঢুকলো যারা কালো গাড়ির খোলে-

মানুষ যদি বেড়াল হয়েও যায়

মজন্তালি চলবে,

যেমন চলে...

তিন অধ্যায়

বাস্তব ছিলো অন্য পাড়ার বন্ধু
কদা-ক্বচিৎ উঁকি মারতো ঘরে
গায়ে গন্ধ, ময়লা জামা-পেন্টুল
দোর দিয়েছি- মন দিয়েছি খেলায়।

বাস্তব হলো চা-দোকানের বেয়ারা
প্রতিদিন তার হাত-ধোয়া জল খেয়েছি
নিত্য দু’বেলা নাম ডেকেছি, তার পর?
নাম-ধাম মুখ সব ভুলেছি কলেজ-গেটের বাইরে।

বাস্তব আজ তীক্ষ্ণ-নয়না তরুণী
এক বিছানায় পালটি খেলাম দু’জনে
শরীর-হৃদয় খুঁড়ে এনেছি সন্তান
খামখেয়ালের নীলচে রঙের শব...

Tuesday, April 10, 2012

নতুন কলম

ধরা যাক, আমি আপনি খুব বন্ধু- একসঙ্গে মদ খাই। এবার ধরুন, দু’জনেই চা খেতে বসে বাঘ-সিংহ মারতে পছন্দ করি আর হিন্দি সিনেমার ভক্ত। শুধু আমাদের হরিহর ইমেজের একটাই কলঙ্ক- আমি ভু-ওয়ান আর আপনি রা-ওয়ান এর ভক্ত। ব্যস! হয়ে গেল। আমরা সন্তর্পণে এই একটি বিষয় এড়িয়ে চলি। পাছে হাতাহাতি হয়! কেন হয়? আমরা সবাই জানি ওই খানেরা আমাদের মত চুনোপুঁটিদের পোঁছেও না। তবু, সমর্থনের সীমা ছাড়িয়ে আমরা অন্যের মত বদলের চেষ্টা কেন করি? কেন আমাদের মনে হয় যে প্রিয় নায়কের সমালোচনা আদতে আমাদেরই সমালোচনা?

“তুমি আসবে বলে তাই... আমি স্বপ্ন দেখে যাই...”

তুমি ঘুমোও স্বাগতা।

ঘুমোও।

ঘুমোও নিশ্চিন্তে নিজেকে জড়িয়ে।
নিজের বালিশে আমাকে ওয়াড় করে পরিয়ে নিয়ে।
আমি আমার গায়ে তোমার কান্নার জলকে নিজের অশ্রু ভেবে জেগে থাকি।

তুমি ঘুমোও সুচেতনা-

এই একা পৃথিবীতে নিজের সব নিরাপত্তাহীনতাকে বালিশে লুকিয়ে রেখে।
পৃথিবী তখনো মহাশূন্যে উদ্দেশ্যহীন ঘুরে চলবে কল্পিত আশ্রয়ের খোঁজে
আমায় সঙ্গে নিয়ে।
আমায় বালিশ করো, বিছানা করো, চাদরও করতে পারো।

শুধু

ভুলেও আমার বন্ধুরা দূরে চলে গেছে ভেবে শান্তিতে ঘুমিও না।

********************************************
(জানি না মশাই কি ছন্দ...)

নাম-তা(ল)

গাল
দিচ্ছো?
দাও।
চড়
মাখতেই
গাল
পাতলাম,
নাও।

খুব চাইছি
থাপ্পড় খাই
বেতো রোগীদের
মত হাতড়াই
জীবন-মানে।

রোয়াবের ঠ্যালা ঠেলেছি বলেই
অর্ধজীবন শেষ।
বাকিটা কাটাতে ভাবছি পরবো
মর্ষকামীর বেশ।

সমর্পণের জামার রঙটা লাল
কিছুতেই দেখা যাবেনা রক্ত উপচে
কিন্তু হৃদয় সেয়ানা –
উগরে দিয়েছে বোতল-খানেক নীলচে।

আভিজাত্যের পেরেক পুঁতেছি মন-কফিনের গায়ে
বেরোবেনা আর প্যান্ডোরাদের আত্মহনন চিন্তা –
যদিও সময়-নৃত্যচপল কাহারবা নিয়ে পায়ে,
উচ্ছৃঙ্খল অর্ধজীবন কাটাবো বাজিয়ে তিনতাল।

************************************************
মিশ্র- অধিকাংশ ৬ মাত্রা মাত্রাবৃত্ত।

সত্য সারপিকো...!

লোকটার নাম ‘ফ্র্যাঙ্ক’।

প্রিয়জনেরা ডাকে ‘পাকো’ বলে। পুলিশে চাকরি করে যদিও, তবু রাস্তায় দেখলে
ধরতে পারবেন না। ঘাড় অবধি লম্বা চুল, মধ্যযুগীয় গোঁফ আর হিপি-সুলভ পোশাকের সঙ্গে আর যাই হোক- পুলিশের যোগাযোগ দূর-দূরান্তেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু, সাধারণ ধারণাকে নস্যাৎ করে লোকটা শুধু দায়িত্ববান তা-ই নয়, তার থেকে একটু বেশিই। সারা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে, নানা ধরনের পুলিশি বিভাগের যেখানেই গেছে- একদিনের জন্যেও তার কর্তব্যবোধ টাল খায়নি। ‘পুলিশ ঘুষ খায়’ আর ‘সূর্য পূর্বদিকে ওঠে’ একই রকম ধ্রুব হয় না, হয়তো ওর মতো মানুষগুলোর জন্যেই। কিন্তু এ হেন প্রাচীর-সদৃশ নৈতিকতায় ধাক্কা খায় অনেক কিছু- ভালবাসার জনের আর্তনাদ, সহকর্মীর কটাক্ষ,

দোলে 'দো'-গুল...

তারকের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি, খপ করে চেপে ধরলো খেজুর। ‘দাদা, দোল মানে কি?’ সকাল সকাল মেজাজ এমনিই সপ্তমে চড়ে থাকে, তায় এই ধরনের
গোলমেলে প্রশ্ন শুনলে বিষ্ণুও নড়ে চড়ে বসবেন। কিন্তু খেজুরের মুখ দেখে বুঝলাম, দরকারটা জেনুইন। এখন দেখুন, কিছু লোক আছে, যারা লেখাপড়া করে, ভাবনা-চিন্তা করে, প্রশ্ন করলে চারটের বদলে দশটা কথা বলে দেয়। তাদের বুদ্ধিজীবী বলে। আমি তো আর বুদ্ধিজীবী নই- এ সব প্রশ্নের উত্তর জানলেও বলার মতো আত্মবিশ্বাস নেই। কিন্তু খেজুরের কাছে আমিই উইকিপিডিয়া। তাই বললাম- ‘দোল মানে হলো দোলা। দোদুল্যমান অবস্থায় থাকা। দোলনায় বসে যা খাওয়া যায়, তাকে দোল বলে।’ উত্তর শুনে খেজুর আরও ভেবলে গেলো। ‘সে তো জানি দাদা, তবে কথাটা সেটা নয়- আমি জিগাচ্ছি এই দোল উৎসব মানে কি?’

টোটার কথা ২


আজ দোল। রাস্তায় সক্কলে রঙের উৎসবের নামে নিজেদের চাপা ইচ্ছে পূরণ করছে। আমি বসে আছি গোপালদার বন্ধ চায়ের দোকানে, মোড়ের বাচ্চাগুলোর ছোঁড়া রঙের কুমকুম গায়ে নিয়ে। ওরা ইতিমধ্যে আমায় পাগল ভেবে নিয়ে মনের সুখে রঙ দিয়ে ক্লান্ত হয়ে এখন পাড়ার কুকুরগুলোর দিকে নজর দিয়েছে। একটা ভীষণ একা গাছ ভরে পলাশ ফুটেছে। হাল্কা হাওয়া দিয়েছে। আমি একা। অল্প দুঃখ হচ্ছে। অনুতাপ?নাহ্‌। পলাশ গাছটা একা নয়। ওর মতো আরও অনেকে আছে জগতে, যারা শান্তিনিকেতনে যেতে না পারলেও ফুল ফোটাতে কসুর করেনা। সামনের বাড়ির দোতলার বারান্দায় একটি ছোট্ট মিষ্টি মেয়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে। আমি একটু হাসলাম। কুচকুচে কালো মুখে সাদা দাঁত দেখে বোধহয় একটু ভয় পেয়েই ভিতরে চলে গেলো মেয়েটা। আমি উঠে পড়লাম টালমাটাল হয়ে।

প্রতিমার কথা



পই পই করে বলে দেওয়া হয়েছে যে সামান্য সাত-দশটা শাড়ি নিয়ে গোলমাল হলে আমায় যেন না ডাকে, তাও ওই ভ্যাবলামুখী অপরাজিতা মেয়েটার কি আমায় না জ্বালালেই চলছিলো না? সকাল এগারোটায় কোনো বুটিক-চেন এর মাল্কিন দোকানে আসা তো দূরে থাক, দোকান খোলার কথাও ভাবে না, সেখানে তোমার বস্‌ এসে পৌঁছনো মাত্র তুমি নিজের অক্ষমতার ফিরিস্তি নিয়ে হাজির হবে? সব কিছু বলে দেবে- করে দেবে প্রতিমাদি-ই যদি, তবে আর কি- বাকি পাওনা টাকা তুলে নিয়ে মানে মানে চলে গেলেই তো পারো! সেই কথাই স্পষ্ট করে বলায় শুরু হল নাটক! সক্কাল সক্কাল ধিঙ্গি মেয়ের নাকের জল দেখলে মাথায় আগুন চড়বে, তাতে আশ্চর্য কি? সেই যে সকালে শুরু হয়েছিলো দুর্যোগের, সন্ধ্যেবেলা সেটাই চরমে পৌঁছলো।

ভাল-মন্দ মিশিয়ে



জানি, অনেক কিছু খুলে বলা হয়নি। অনেক ধোঁয়াশা জমে উঠে এখন আমার ছোট্ট জগৎটা ঢেকে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে। আসলে তিতিরের প্রসঙ্গ এলেই আমি কেমন একটা রক্ষণাত্মক খোলসের মধ্যে ঢুকে পড়ি। বিশ্বাস করুন, ওর আমার মেয়ে হয়ে জন্মানোর কথা ছিলো। প্রকৃতির সেই অনিচ্ছাকৃত ভুল আমি না শোধরালে আর কে-ই বা আছে? নিজের ছেলের কথা বলছেন? টোটা কে আমি এখন সামান্য হলেও ভয় পাই। না, ওকে নয়, ওর একগুঁয়েমিটাকে। ভুল বুঝবেন না, এখনো প্রতি বেলায় খেতে বসে মনে হয় কি খেলো, কোথায় খেলো ছেলেটা- প্রতিদিন ফিরতে দেরি হলে উৎকণ্ঠা শুরু হয়। কিন্তু যখনই ওকে দেখি- মুখে একরাশ বিরক্তি- গলায় আমার প্রতি উপেক্ষা উপচে উঠছে- বাড়ির সকলের জন্য বরাদ্দ রেখেছে অবজ্ঞা- তখন মনে হয়, যে ময়দার তালটাকে জন্ম দিয়েছিলাম আজ থেকে কুড়ি বছরেরও বেশি আগে- বদলাতে বদলাতে আজ আর তার কিছুই বাকি নেই ওই উদ্ধত যুবকের শরীরে। অন্যদিকে তিতির- আমার না হওয়া মেয়ে। নেহাত মায়ের বদলে জেম্মা বলে ডাকে- নইলে গোটা পৃথিবী জানে আমার সাথে ওর সম্পর্ক।