Tuesday, December 13, 2011

দু'টি পুরনো লেখা

অল্প কিছু বিরক্তি

এইটাই আমার স্বাভাবিক লেখার ভাষা। ইঞ্জিরিতে লিখতে গিয়ে সে এক কেলোর কীর্তি হয়েছিল। লোকের অনেক আগে নিজের চোখেই সেই সব লেখা জোলো লাগছিল। এই ব্লগে যা ইচ্ছে হয় লিখবো, বিষয় আর ধরণ নিয়ে মাথা ঘামাতে হবেনা। তবে, যারা পড়বেন, তাঁদের একটিই অনুরোধ, বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন।

সে সব কথা থাক। প্রথমে কিছু অপ্রিয় আলোচনা সেরে নেওয়া যাক। বম্বেয় আবার সিরিজ বিস্ফোরণ। প্রাণের দাম আবার তলানি তে এসে ঠেকেছে। চায়ের দোকানে সকালের পেপার হাতে বসার আগে দাদু জিগোচ্ছেন: "কি হে? ক'টা গেলো?", উত্তরে দু'অঙ্কের সংখ্যা শুনে হতাশ হচ্ছেন, কিন্তু মুহুর্তে নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছেন। ফেসবুকে প্রবাসী বাঙ্গালী Status Update দিচ্ছে "এরপরেও ওসামা কে মারা খারাপ বলবে কিছু ভারতীয় বুদ্ধিজীবী, নিজেদের 'উদারপন্থী' দেখানোর আশায়; কিন্তু এতগুলো লোক মরলো, টুঁ শব্দটিও করবেনা।" অন্য একজন: "কাসভ বাবাজী, এর পরেও তুমি বহাল তবিয়তে থাকবে, তোমার মৃত্যুদণ্ড বহাল হওয়া অবধি এই দেশটা টিকলে হয়।"

কেউ বোধহয় ভুল নয়। কিন্তু ঠিক কি ভাবে এই বিষয়ে আলোচনা বর্তমান অবস্থার পুনরাবির্ভাব আটকাবে, তা তো বুঝলাম না। নাক আর নরুণের বিনিময়ে উভয়পক্ষের হাতেই থাকে লবডঙ্কা, জানেন তো? ওসামা আর কাসভ, এ সব এখন শুধু নাম। কার্যকর শক্তি যারা আছে, তাদের আমি-আপনি চিনিওনা। পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে ধরতেও পারবোনা। USA দেশটা কেন এত 'ছুঁসনা লো' হয়ে আছে মনে হয়? ওখানে কি সবাই ঘাসে মুখ দিয়ে চলে? পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্র ছেলেটা আসলে যে কি, তা নিয়ে যখন সন্দেহ দেখা যায়, তখন paranoia স্বাভাবিক। ভীতিটা অন্যত্র (পড়ুন কিছু বিদেশী নাম) সরিয়ে রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমনো, বা প্রতিটি বেড়ালই আসলে বাঘ ভাবা যতটা অর্থহীন, ঠিক ততটাই অর্থহীন এই চোর পলায়নোত্তর বুদ্ধির দীপ্তি। দেশের বড় নায়ক অন্য দেশের বিমানবন্দরে হেনস্থা হলে আমরা সেই ব্যবস্থার অযৌক্তিকতা নিয়ে সরব হই, কিন্তু মনে হয়না, আমাদের এবার paranoid হওয়ার সময় এসেছে? বিদিশী সিরিয়াল 'Sopranos' এ দেখানো হয়, পাকা খুনেও নিজের আর পরিবারের সুরক্ষার কথায় সন্ত্রাসবাদী দের পুলিশের(ঠিক পুলিশ নয়, 'ফেড') হাতে ধরিয়ে দেয়। আমাদের এই বুদ্ধিটা ঠিক কবে হবে বলুন তো? জনসংখ্যা বেশী হলে প্রাণের দাম কি কমে যায়?

ডিং-ডং!! 

কাল রাতে বহুদিন পর একটা ethical dilemma র সামনে পড়লাম।দিব্যি খাওয়া-দাওয়া সেরে একটা সিনেমা দেখতে বসেছি, এমন সময় আমাদের কমপ্লেক্সের সামনের বাড়ি থেকে চিল-চীৎকার ভেসে এল। মহিলা কন্ঠ, ভাষাহীন। চমকে গিয়ে কান পাতলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার। উঠে গিয়ে জানলায় দাঁড়াতে অস্ফুটে শোনা গেল ‘দোহাই তোমার’ গোছের কিছু কথা। দুটো বাড়ির মাঝে বেশ বড় ফাঁকা জায়গা, সেখানে দু-তিনটে গাড়ি, আর একটা কদম গাছ, তারপর ও অনেকটা জায়গা। এতটা ছাপিয়ে ঘনঘন চীৎকার যখন শোনা যাচ্ছে, তখন ভালই গোলমাল বেঁধেছে নিশ্চয়ই। জানলায় দাঁড়ানো অভব্যতা হচ্ছে ভেবে বাইরে গেলাম দরজা খুলে-বাইরে অন্ধকার, আমায় দেখা যাবেনা। ইতিমধ্যে নাইট-গার্ড এসে দাঁড়িয়েছে দু-জন। তারাও আমারি মত ভাবছে এইটাই কি সেই সময়, যখন বাধা দেওয়া উচিত? নাকি এখনো অবস্থা সেই ceiling এর নীচে আছে, যেখানে একটা পরিবার এর ঠুনকো মর্যাদা ‘বেল না বাজানোর’ ওপর নির্ভর করে?

ইতিমধ্যে বেশ কিছু থালা-বাটির আওয়াজ এসেছে কানে। আবার একটা আর্তনাদ। আমার কি কিছু করা উচিত? আর কেউ তো বেরোয়নি নিজেদের ঘর থেকে। কিছু বললে সেটা সাহস হবে না ধৃষ্টতা? এরকম কি মাঝে-মধ্যেই হয়, কিন্তু গত দেড় বছরে তো কখনো শুনিনি? শুনিনি কি? ওই বাড়িতেই সেই একবার দুপুরবেলা পুলিশ এসেছিল না? সেই যে, রোমিও নামের কুকুরটা খুব ডাকছিলও--

নিজের ভাসমান মনকে টেনে আনলাম। বাড়িতে পুলিশ আসলেই কেউ দাগি আসামি হয়না বা “ওদের ওরকম হয়” ভাবার স্বাধীনতা আসেনা। আমি না শিক্ষিত? “I shouldn’t judge too quickly.” সেতো ঠিক আছে, কিন্তু এখনো আমার আর ওই বাড়ির মাঝে বিরাট ফাঁক। আজ যদি বাধা দিতে গিয়ে ওই বউটাই বলে এটা ওদের নিজেদের ব্যাপার, তবে কাল থেকে তো ঘর ছেড়ে বেরনো যাবেনা। আর কিছু না করলে যদি কাল একটা ডেড-বডি বেরোয় ওই ঘর থেকে?

নাঃ, নাইট-গার্ডটা আমার মতই ভাবে। এগিয়ে গেল বাড়িটার দিকে। প্রায় একই সময়ে ওই ফ্ল্যাটের ওপর-নীচের ফ্ল্যাটে আলো জ্বলে উঠলো। নীচতলা থেকে একজন বয়স্ক জোরে গলা খাঁকারি দিলেন। আওয়াজ আরো বার-দুয়েক হয়ে বন্ধ হল। আমি আরো মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে থেকে ঘরে ঢুকলাম। কল্পনায় দেখতে পেলাম, আশপাশের সব বাড়িতে দম্পতিরা একে অন্যকে সাহস জোগাচ্ছে, নিশ্চুপে, যে, ‘আমাদের কখনো এরকম হবেনা’। ওটা একটা খুব প্রয়োজনীয় ভাঁওতা। ভাল ব্যাপার বলছিনা, কিন্তু ধর্ম-বিশ্বাসের থেকে তো কম! সে যাগ্গে‌, আমার শুধু চিন্তা হ’ল, প্রয়োজন পড়লে আমি কি যেতে পারবো কখনো ‘বেল বাজাতে’? যদি যাই,কে ঠিক করে দেবে তার সঠিক সময়?

No comments:

Post a Comment

Give me your thoughts, I will give you replies. :P